“অপারেশন সার্চলাইট” বলতে কী বোঝায়?
পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) যে গণহত্যার অভিযান চালিয়েছিল,তার নাম “অপারেশন সার্চলাইট” ।

“অপারেশন সার্চলাইট” নেতৃত্বঃ
“অপারেশন সার্চলাইট” -এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন,গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান।
ঢাকা শহরে গণহত্যার মূল দায়িত্বে ছিলেন, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
ঢাকার বাইরে দায়িত্বে ছিলেন, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা।
পরিকল্পনা পদ্ধতিঃ
২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে – মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি – মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন।
অপারেশন পরিচালনার স্থানঃ
অপারেশন পরিচালনার জন্য চিহ্নিত স্থানগুলো ছিলঃ ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর এবং সিলেট।
“অপারেশন সার্চলাইট” এর কারনঃ
পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের কাছে বাঙালিরা সব সময়ই নীচু শ্রেণির ছিল ,যাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি থেকে জীবনাচরণ সবই ছিল “অপাকিস্তানি” । অখণ্ড পাকিস্তানের নামে সেই অপাকিস্তানিদের “শুদ্ধ” করার জন্য অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে।
যার ফলস্বরূপ, বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয় পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ )।
“অপারেশন সার্চলাইটের” সিদ্ধান্ত সময়ঃ
অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত হয় বেশ আগেই, ৭১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক রবার্ট পেইনের “ম্যাসাকার” বইতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের অনুষ্ঠিত এক সামরিক বৈঠকে- ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের খতম করার সিদ্ধান্ত নেন।
ওই বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেনঃ”(কিল থ্রি মিলিয়ন অব দেম, অ্যান্ড দ্য রেস্ট উইল ইট আউট অব আওয়ার হ্যান্ডস)।” “ওদের ৩০ লাখ মেরে ফেলো। বাদবাকিরা আমাদের হাত থেকেই খেয়ে বেঁচে থাকবে ” ।
‘অপারেশন সার্চলাইটের” মূল লক্ষ্যঃ
২৫শে মার্চ রাতে “অপারেশন সার্চলাইটের” মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পিলখানায় ইপিআর বাঙালি জওয়ানেরা। এ অভিযানের আরও ছিল টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও, টেলিগ্রাফসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ধ্বংস করা, আওয়ামী লীগ এবং এর ছাত্রসংগঠনসহ নিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যায় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীর হত্যা করা, ঢাকাকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা।
গণহত্যাঃ
সাংবাদিক রবার্ট পেইনের মতে, অভিযানের প্রথম রাতেই শুধু ঢাকা শহরে ৩০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। এরপর ,গণহত্যা চলতে থাকে শহর পেরিয়ে গ্রামে।
ভয়াবহতাঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ,বিশ্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে অন্যতম ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন, “সমাজবিজ্ঞানী” আর জে রুমেল। তিনি তাঁর “ডেথ বাই গভর্নমেন্টস “বইতে লিখেছেনঃ-
“ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা আধা সামরিক বাহিনীগুলো প্রতি ২৫ জন বাঙালির একজনকে হত্যা করেছে” । যার সবথেকে কদর্য ও কুৎসিত চেহারা দেখা গেছে “একাত্তরের” ২৬৭ দিনে।
গবেষক সুসান ব্রাউনমিলার, “অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন-উইমেন অ্যান্ড রেপ” বইতে লিখেছেনঃ- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণ এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, আট বছরের শিশু থেকে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত বর্বরতার শিকার হয়েছে।