আগুন এর একটাই গুণ— সুধু জ্বালাতেই জানে, নিভাতে বা অন্য কিছু নয়।
এই অগ্নি কাণ্ড বা খুদা এতোটাই একপাক্ষিক যে, জান-মাল সহ কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখে না।
বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে মার্কেট-বহুতল ভবন, যান-বাহন ইত্যাদির প্রায় সকল ক্ষেত্রে,
অগ্নি নির্বাপক বা আগুন নিবানোর বা নিয়ন্ত্রণে আনার সিস্টেমের অভাব বা অপ্রতুলতা
এবং আমাদের ভয়ানক অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে যেকোন সময় ,যেকোন স্থানে যে কেউ
অগ্নিকাণ্ডের হয়।
পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একটা ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হয়ে গেল, বনানী এফ আর ভবন এ ।
একটু সচেতন হলেই, আমরা অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রান পেতে পারি।
প্রতিরোধ গড়ে তুলুনঃ
=> আগুন থেকে বাঁচার শ্রেষ্ঠ উপায় , সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ডের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা ।
=> কী কী কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে বা হয়, তা জানা প্রয়োজন।
=> আগুনের ধর্ম, উৎস, স্বভাব ও অনুঘটকগুলো কী তা যতোটা সম্ভব জানা উচিত।
=> প্রাথমিক অবস্থায় আগুনকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায় তা জানতে হবে।
=> নিজের সচেতনতার পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন করে তুলতে হবে।
আগুন জলে কিসের উপস্থিতিতেঃ
=> দাহ্য বস্তু (Fuel)
=> অক্সিজেন (O2)
=> তাপ (Heat)
এই তিনটি উপাদানের যে কোন একটিকে অপসারণ বা বাধাগ্রস্ত করতে পারলেই অগ্নি নির্বাপণ সম্ভব।
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার মূল সূত্র এটাই।
আগুনের ধরনঃ
=> কঠিন পদার্থের আগুন : – কাঠ, বাঁশ ইত্যাদির আগুন।
=> তরল পদার্থের আগুন : যেমন- তেল, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদির আগুন।
=> গ্যাসীয় পদার্থের আগুন : গ্যাস লাইন, গ্যাসের চূলার আগুন ইত্যাদি।
=> ধাতব পদার্থের আগুন :সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির আগুন।
কেউ কেউ আবার বৈদ্যুতিক আগুন নামে আরেকটি আগুনের ধরনের উল্লেখ করেন।
আসলে, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে যে আগুন সৃষ্ট হয় তা রূপান্তরিত হয়েই কঠিন, তরল, গ্যাসীয় বা ধাতব ধরনের আগুনে পরিণত হয়।
অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা:
আগুনের ধরন বুঝে নেভানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগুনের সূত্রপাত ঘটে যাওয়া মানেই দাহ্যবস্তুতে আগুনে লেগে যাওয়া।
তখন বাকি যে দুইটা উপাদান, অক্সিজেন ও তাপ, তার যেকোন একটি অপসারণ বা বাধাগ্রস্ত করতে হয়।
কোন্ উপাদানটিকে অপসারণ করবেন তা নির্ভর করবে আগুনের ধরনের উপর।
কঠিন পদার্থের আগুন : এ ক্ষেত্রে অক্সিজেন বা তাপ এর যে কোনো একটিকে অপসারণ বা বাধাগ্রস্ত করতে হবে।
পানি ছিটিয়ে দাহ্যবস্তুর তাপমাত্রা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তরল পদার্থের আগুন : এ ধরনের আগুনের ক্ষেত্রে ,পানি দ্বারা তা নেভানো যায় না।
তৈলাক্ত তরলের আপেক্ষিক ওজন পানির চেয়ে হালকা বলে, পানি ব্যবহার করলে পানিতে ভেসে এ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে দাহ্যবস্তুতে আগুন নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ও ফোম বেশি কার্যকর। ড্রাই পাউডারও ব্যাবহার করা যায়।
গ্যাসীয় পদার্থের আগুন : এ আগুনে পানি অকার্যকর।
তাই ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, ফোম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
ধাতব পদার্থের আগুন : এ আগুন পানিতে নেভানো যায় না।
ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, ফোম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে এ আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
এ ধরনের আগুনে পানি ব্যবহারে হিতে বিপরীত হয়, আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়।
অনাকাঙ্খিত দূঘটনা থেকে বাঁচার কিছু নির্দেশনাঃ
=> রান্নার পর চুলার আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলতে হবে।
=> বিড়ি-সিগারেটের জলন্ত অংশ নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে।
=> ছোট ছেলেমেয়েদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে দূরে রাখতে হবে।
=> খোলা বাতির ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে।
=> ক্রটিযুক্ত বা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার, ফিটিংস ও সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
=> বাসায়, অফিসে বৈদুতিক তার ও ওয়ারিং মাঝে মাঝে অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
=>সম্ভাব্য অগ্নিকান্ডতে হাতের কাছে সব সময় দু’বালতি পানি বা বালু মজুদ রাখতে হবে।
=>বাসাবাড়ি, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং মাঝে মাঝে সেগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে।
=>প্রতিটি শিল্পকারখানা, সরকারী ও বেসরকারী ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন এর আইন ও বিধি অনুযায়ী অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।
=> কলকারখানায় অগ্নি নির্বাপণেরর পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
=>গুদাম বা কারখানায় ধুমপান নিষিদ্ধ ও দৃশ্যমান স্থানে সতর্কীকরণ পোষ্টার প্রদর্শন এর ব্যবস্থা করতে হবে।
=>স্থানীয়ভাবে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপনের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলুন।
=>আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের সেবা চাইতে ৯৯৯ নম্বরে কল করতে হবে।